প্রকল্প সম্পর্কে

WhatsApp Image 2024-12-18 at 10.41.02 PM (1)

গ্রামীন অর্থনীতিতে প্রাণী সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রামীন কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে কৃষি জমির পরিমান হ্রাস পাওয়ায় কৃষককে গবাদী পশু পালন করে অর্থনৈতিক চাহিদা পুরন করতে হয়। গবাদী পশু পালনের মাধ্যমে আমাদের আমিষের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি শিল্পের কাচা মাল, জমির উর্বরতা রক্ষার্থে জৈব সার তৈরী, দুখের চাহিদা পুরণ এবং হাল চাষে গবাদী পশু ব্যবহার হয়ে থাকে। সেই দিক বিবেচনা করলে প্রাণী সম্পদ এর রক্ষানেবক্ষণ, গবাদী পশু পালন এবং প্রাণী সম্পদ উন্নয়ণের বিষয়টি বেশ গুরত্বের দাবীদার। যে কারণে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে থাকে। সরকারী দপ্তরের পাশাপাশি বে-সরকারী উদ্যোগে উক্ত কর্মসুচী গুলি আরও জোরদার করা যে কোন উন্নয়নমুলক বোনাসেবী প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

প্রেক্ষাপট

আমাদের প্রাণী সম্পদের উপর মাঝে মাঝে নানা ধরণের রোগ আক্রমন করে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমিত রোগ প্রাণীসম্পদকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয় এবং মাঝে মাঝে অনেক প্রাণী মারা যায়। আর তার ফলে গ্রামীন জনগোষ্ঠি যাদের অর্থনৈতিক একমাত্র সম্বল টুকু হারায়ে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও নিয়মিতভাবে ভাইরাস জনিত ৫ টি রোগ গবাদী পশুকে ক্ষতি করে থাকে। আবার কৃমির কারণেও আমাদের দেশের গবাদী পশু ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না এবং সুস্থ্য থাকতে পারে না। যার ফলে প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে ব্যঘাত সৃষ্টি হয়।

প্রকল্পের যৌক্তিকতা

উল্লেখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী প্রাণীসম্পদ বিভাগের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা গ্রহনের আগ্রহ সৃষ্টি সেই সাথে প্রাণী সম্পদ রক্ষার্থে মারাত্মক ভাইরাস জনিত সংক্রমন রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারী সেবার পাশাপাশি বেসরকারী সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে পশু চাষীকে সেবা গ্রহনের সুবিধা সৃষ্টি করতে সম্প্রসারিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা দরকার। দেশের প্রাণী সম্পদের উন্নয়ন এবং রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু মাত্র সরকারী দপ্তরের নহে। সে কারনেই জাগো নারী প্রগতি সংস্থা জেএনপিএস) সারা দেশে গবাদি প্রাণীসম্পদের রোগ প্রতিরোধ, কৃমি মুক্তকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিম্নোক্ত প্রকল্প গ্রহন করে গবাদী পশুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে দীর্ঘদদিন কাজ করে আসছে। সেই কাজের বাস্তবায়নে প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয় অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সার্বিক সহযোগীতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে।

প্রকল্পের নাম

“প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদিত টিকাবীজ মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ ও সচেতনতামুলক কার্যক্রম পরিচালনা কর্মসুচী”

লক্ষ্য

গবাদী রোগ প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম জোরদার এবং স্বল্পমূল্যে কৃমি প্রতিরোধ, ভিটামিন, জীবাণু নাশক ঔষুধ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ।

প্রধান উদ্দেশ্য

প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বে-সরকারী উদ্যোগ নিশ্চিতকরণ।

বিশেষ উদ্দেশ্য

১) প্রাণীসম্পদ রক্ষার্থে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

২) প্রাণীসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রান্তিক চার্থী ও গ্রামীন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। ৩) প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বা মাংশের অভাব পূরনে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ।

প্রধান কর্মসুচী

: ১) গবাদী পশুপাখীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ।

২) উপজেলা প্রাণীসম্পদ চিকিৎসক দ্বারা নিয়মিত পশু চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ।

৩) প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদিত টিকাবীজ মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

৪) প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ে দক্ষ সেবাকর্মী তৈরীকরণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ।

৫) প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধ ও গবাদী পশুপালন সংক্রান্ত সচেতনায়ক কর্মসুচী বাস্তবায়ন।

৬) মোটাতাজাকরণে কোম্পানী নির্ধারিত মূল্যে কৃমি নাশক ঔষুধ ও অন্যান্য কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ।

কর্ম-পরিকল্পনা

: ১) প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদিত টিকাবীজ সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়।

‘২) সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাক্সিনেশন নিশ্চিতকরণ।

৩) ৫টি গবাদী পশুর রোগ প্রতিরোধে পশু মালিককে সচেতনীকরণ।

৪) ভ্যক্সিনেশনে বেসরকারী দক্ষতা উন্নয়নে যুব প্রশিক্ষণ প্রদান।

৫) বিশেষ প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তা গ্রহন।

৬) মাঠ পর্যায়ে স্বল্প মুল্যে কৃমি নাশক, ভিটামিন ও জীবানু নাশক ঔষুধ প্রয়োগ।

৭) নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত গরু মোটাতাজকরণ পরামর্শ প্রদান।

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা

: গবাদী পশুর সুস্থ্যতা এবং গবাদী পশুসম্পদ উন্নয়নে কর্ম এলাকায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে “জাগো নারী প্রগতি সংস্থা (জে এন পি এস)” পরিচালিত “প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদিত টিকাবীজ মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ ও সচেতনতামুলক কার্যক্রম পরিচালনা কর্মসুচী” -এর একটি সেবা দল নিয়মিত কৃমিনাশক এবং রোগ প্রতিষেধক প্রদানে কর্মরত থাকবে। সেবা দলটি প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বে-সরকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসাবে পশু সম্পদ রক্ষার্থে এবং বিজ্ঞান সম্মত গরু মোটাতাজাকরণে কৃমি নাশক ও রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেদক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। সে ক্ষেত্রে জাগোনারী প্রগতি সংস্থার কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সহায়তা গ্রহন করবে। কৃমি নাশক ও প্রতিযেধক প্রদানে জাগোনারীর পশু সেবা কর্মীরা কুলচেইন মেইনটেইন করবে। সেই ক্ষেত্রে জাগো নারী প্রগতি সংস্থার কর্মীরা ভ্যাক্সিনেশনের সমস্ত উপকরণ নিজস্ব সংস্থার অর্থায়নে নিশ্চিত করবে। মাঠ পর্যায়ে জাগো নারী প্রগতি সংস্থার কর্মীরা পশু মালিককে রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত কৃমি নাশক প্রদানের জন্য সচেতন রাখবে এবং ৫ টি রোগ সম্পর্কে সচেতন করবেন। পবাদী পশু এবং হাসমুরগীর রোগ প্রতিরোধে করনীয় এবং রোগের লক্ষণ ও রোগ ছড়ানোর মাধ্যমকে চিহ্নিতকরণে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহয়তা করবেন। এই কর্মকান্ডগুলি আলাদা আলাদা ভাবে করা ছাড়াও নিয়মিত পশু ক্যাম্পেইন করবেন। উক্ত ক্যাম্পেইনে পণ্ড মালিককে সচেতন করার পাশাপাশি রোগ প্রতিষেধক/টিকা ও কৃমি নাশক প্রদান করবেন। পশু চিকিৎসা, টিকাবীজ, রোগ প্রতিষেধক প্রয়োগের সমস্ত উপকরণ জাগোনারী প্রগতি সংস্থা নিজ উদ্যোগে এবং নিজ খরচে ক্রয়, সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করবেন।

কর্মসুচী বিশ্লেষণ:

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা:

গবাদী পশুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন কর্মসুচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষ সেবাকর্মী তৈরী করা হবে এবং গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে সার্ভিস চার্জ গ্রহন পূর্বক গবাদী পশুর ভিটামিন, কৃমিনাশক ও জীবানুনাশক ঔষুধ সামগ্রী প্রদান করা হবে।

টিকা কার্যক্রম:

১) প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদিত সরকার নির্ধারিত মূলে ৫টি রোগের টিকাবীজ ক্রয়।

২) চাহিদা মোতাবেক প্রান্তিক চাষী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত সরকার নির্ধারিত মূল্যে টিকা প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

৩) দক্ষ টিকা কর্মী দ্বারা টিকা প্রদান।

৪) টিকার মান সংরক্ষণে কুলচেইন মেইনটেইন।

৫) বিশেষ প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তা গ্রহন।

প্রশিক্ষণ:

প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ে দক্ষ সেবাকর্মী তৈরীকরণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। দক্ষ টিকা প্রদান কর্মী ও গবাদী পশুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ কর্মসুচী বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তা গ্রহন করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সেবাকর্মীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও সরঞ্জাম প্রদান করা হবে যাতে করে তারা সেবা প্রদানে টেকনিক্যাল নলেজ শেয়ার করতে পারে। জাগো নারী প্রগতি সংস্থা আয়োজিত এবং প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবাকর্মীদেরকে যথাযত কর্তৃপক্ষের তরফ হতে তাদের প্রশিক্ষণের সফলতা স্বরুপ সনদের আয়োজন করা যেতে পারে।

সচেতনতা কর্মসূচী

১) মাঠ পর্যায়ে তড়কা রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ।

২) মাঠ পর্যায়ে বাদলা রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ।

৩) মাঠ পর্যায়ে ক্ষুরা রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ।

৪) মাঠ পর্যায়ে লাম্পি রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ।

৫) মাঠ পর্যায়ে গলাফুলা রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ।

৬) মাঠ পর্যায়ে গবাদী রোগ প্রতিরোধের উপায় বিশ্লেষণ।

৭) মাঠ পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের উপায় বিশ্লেষণ।

৮) মাঠ পর্যায়ে প্রাণীসম্পদ রক্ষার্থে টিকা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ।

৯) মাঠ পর্যায়ে গবাদী পশুর যত্নে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ।

১০) মাঠ পর্যায়ে কৃমি দমনে গবাদী পশু, হাঁস-মুরগীকে নিয়মিত কৃমি ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান।

গরু মোটাতাজাকরণ

: ১) গরু মোটাতাজাকরণে স্বল্পমুল্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত কৃমি নাশক প্রয়োগ।

২) উপজেলা প্রাণীসম্পদ চিকিৎসক দ্বারা নিয়মিত পশু চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ।

৩) প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে পশু পালনপালনকারীকে সময় মত সেবামূলক পরামর্শ প্রদান।

কাঙ্খিত ফলাফল

: ১) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সংক্রমিত রোগ হতে প্রাণী সম্পদ রক্ষা হবে।

২) সুস্থ্য সবল পশু পালনের মাধ্যমে পশু মালিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

৩) পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের মধ্যে মাংসের চাহিদা পুরন হবে।।

৪) প্রাণীসম্পদ রক্ষার্থে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্প্রসারিত এবং নিশ্চিত হবে।

 

জাগোনারী প্রগতি সংস্থা (JNPS)
আদিতমারী, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ২য় তলা (রেল স্টেশন সংলগ্ন), লালমনিরহাট।

Website: www.jagonariprogatisangstha.org

E-mail: jnps2003@gmail.com